শীতল মুচি

শীতল মুচি
তাকে আমি ধরলাম
মাথায় টাক প’ড়ে গেছে
খাঁদা নাক
চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছে
সাইলেনাসের মতো।
পৃথিবীর রস সে চায়:
মদ- মেয়েমানুষ- বাঁশি- গ্রামোফোনের গান- রেডিও।
ফুটপাতে ব’সে যখন সে জুতো সেলাই করে
চর্বি ঘাঁটে
কেউ তা বোঝে না

আমার জুতো রি-সোল ক’রে সে ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল
আমি তাকে ধরলাম
তার কথা শুনি
তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি
দেখি… সাইলেনাস

কলকাতার মাঠে-ঘাটে এরা অগণন
এই সাইলেনাসের দল
(যদিও জীবনে এরা এক ফোঁটা মদ পায় নি
না পেয়েছে মেয়েমানুষ)
শুধু তার খাঁদা নাক পেয়েছে এরা
আর ঘোলাটে চোখ
আর মাথার টাক
আর পৃথিবীর রস চেখে দেখবার স্পৃহা
বার্থকন্ট্রোল বা স্টেরিলিজেশনের বজ্রাঘাতে
এদের জন্ম যারা নাকচ করতে চায়
তারা কী নীরস!
কেমন অর্থহীন জিওমেট্রির মতো!

ভগবান তবু জিওমেট্রি নয়
পোলিটিক্যাল ইকনমিস্ট নয়
প্রফেসর নয়;
দেবতা রসের
শীতল মুচির দেবতা সে।

[সাইলেনাস: গ্রিক পুরাণে স্যাটুরয়-রা (Satyrs) ডায়োনুসাস (Dionysus)-এর সহচর, অরণ্যানী ও পর্বতমালার দৈব তারা; বিশেষ ভাবে তারা প্রজননের
প্রতিভাটা সঙ্গে জড়িত। কিম্ভুতকিমাকার চেহারা তাদের; চেহারার বেশিরভাগটা তাদের মানুষের মতো, অধিকন্তু তাদের কাছে জন্তুজানোয়ারের
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ- ঘোড়ার লেজ, ছাগলের পা- এ-রকম। তাদের কামনাবাসনাটা খুব তীব্র, প্রবল তাদের ফুর্তি করার বাতিক। সাইলেনাস এ-রকম একজন স্যাটুরয়।
একাধিক সাইলেনাসের কথা কবিরা বলেছেন অবশ্য; তাদের চেহারা ও চরিত্রের ঘরানা প্রায় সবারই এক রকম, একজন মাতাল ও বৃদ্ধ স্যাটুরয়। এদের
কখনাও-কখনাও ডায়োনুসাসের শিক্ষক বলা হয়েছে, বলা হয়েছে সঙ্গীতের ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের লোক। ঝর্নার জলের সঙ্গে মদ মিশিয়ে খাইয়ে রাজা মিডাস একজন
সাইলেনাসকে ধ’রে ফেলেছিলেন; সাইলেনাস তাঁকে এই জ্ঞানটা দান করেছিলেন যে, না জন্মানোর চেয়ে সুখের জিনিস আর নেই; আর যদি জ’ন্মে থেকেই
থাকো, তাহলে যত তাড়াতাড়ি পারো, ম’রে যাও।]