সূর্যকরোজ্জ্বলা

আমরা কিছু চেয়েছিলাম প্রিয়;
নক্ষত্র মেঘ আশা আলোর ঘরে
ঐ পৃথিবীর সূর্যসাগরে
দেখেছিলাম ফেনশীর্ষ আলোড়নের পথে
মানুষ তাহার ছায়ান্ধকার নিজের জগতে
জন্ম নিল- এগিয়ে গেল;- কত আগুন কত তুষার যুগ
শেষ ক’রে সে আলোর লক্ষ্যে চলার কোনও শেষ
হবে না আর জেনে নিয়ে নির্মল নির্দেশ
পেয়ে যাবে গভীর জ্ঞানের,- ভেবেছিলাম,
পেয়ে যাবে প্রেমের স্পষ্ট গতি
সত্য সূর্যালোকের মতন;- ব’লে গেল মৃত
অন্ধকারের জীবিতদের প্রতি।

জীবিত, মানে আজ সময়ের পথে
বালি শিশির ধুলোর মতো কণা
মিলিয়ে তাদের প্রাণের প্রেরণা
ক্রমেই চরিতার্থ হ’তে চায়।
চারদিকে নীল অপার্থিবতায়
সোনার মতন চিলের ডানায় কোনও
খাদ মেশানো নেই, তবু তার প্রাণে
কোটি বছর পরে কোনও মানে
বার করেছে মন কি প্রকৃতির?
মানুষ তবু পাখির চেয়ে ঢের
অমৃতলোক হাতের কাছে পেয়ে
তবু কি অমৃতের?

মানুষ আমি,- মানুষ আমার পাশে;
হৃদয়ে তার হৃদয় মেশালেও
ব্যক্তি আমি, ব্যক্তিপুরুষ সে-ও;
দ্বীপের মতন একা আমি তুমি;
অনন্ত সব পৃথক দ্বীপের একক মরুভূমি:
যে যার পরিপূর্ণ অবিশ্বাসে
র’য়ে গেছে;- সেখান থেকে ব্যাজস্তুতি কপট প্রণয় ভয়
দেখ কেমন উৎসারিত হয়;
প্রাণের প্রয়াস রয়েছে তবু, তাই
দেখেছি মানুষ অনর্গল অন্ধকারে ম’রে
মানবকে তার প্রতিনিধি রেখে গেছে,- হয়তো একদিন
সফলতা পেয়ে যাবে ইতিহাসের ভোরে।

চারদিকেতে সব মানুষের ব্যথা মধুরতা
নির্মলতার সাগর-সূর্যে ঝরে।
বন্ধু আমার ভোরে এলে দেয়ালে ছায়া পড়ে
তবুও কি ম্যামথ- পৃথিবীর?
সে কোন্ যুগের সরীসৃপের অব্যক্ত শরীর
কামনা ভুল কুজ্ঝটিকায় সে সব অসঙ্গতি
এনেছিল- তাদের তুমি সহিষ্ণুতায় শুদ্ধ ক’রে নিয়ে
ইতিহাসের অন্ধকারে প্রথম শিশু মানুষ জাগিয়ে
চলছ আজও একটি সূর্য হঠাৎ হারিয়ে ফেলার ভয়ে;
হয়তো মানুষ নিজেই স্বাধীন, অথবা তার দায়ভাগিনী তুমি;
ওরা আসে, লীন হয়ে যায়; হে মহাপৃথিবী,
সূর্যকরোজ্জ্বল মানুষের প্রেম চেতনার ভূমি।

মাসিক বসুমতী । ফাল্গুন ১৩৫৬