ভারতে মুক্তিযুদ্ধ ট্রেনিং শিবির

২৫শে মার্চের পাকিস্তানী হামলার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলো পাকিস্তানী বাহিনীর অব্যাহত হামলার মুখে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা হামলার ধারা পরিচালনা করতে করতে এক পর্যায়ে বর্ডার অতিক্রম করে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে থাকে। অপরদিকে হাজার হাজার তরুণ ছাত্র যুবক দলে দলে ছুটে যেতে থাকে ভারতে। এভাবেই গড়ে ওঠে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবির।

মে মাসের শেষের দিকে তরুণ-যুবকের দল ভারত অভিমুখী হয়ে ওঠে। এর পূর্বে তেমন কোন প্রাণ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়নি। এই মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি প্রথম ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করি ইছামতি নদীর ভারতীয় পাড় ঘেঁষে হাছনাবাদ বন্দরে, হিংগলগঞ্জে এবং ধীরে ধীরে ট্রেনিং শিবির সম্প্রসারিত হতে হতে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত সর্বমোট ১১টি শিবিরে পরিণত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বশীরহাট মহকুমার সর্বত্রই ট্রেনিং শিবিরগুলো ছড়িয়ে ছিল। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে হাজার হাজার তরুণ যুবকের প্রচণ্ড ভীড় জমতে থাকে। সমগ্র পশ্চিম বঙ্গের বর্ডার এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের তীর্থস্থানে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে। যে কোন তীর্থযাত্রীদের তুলনায় তাঁরা ছিল ত্যাগী এবং নিবেদিত। একেবারেই সহায় সম্বলহীন। কারো সঙ্গে অতি সামান্য পুঁটলি, কারো সঙ্গে কেবল লুঙ্গী-গামছা, কারো তাও নেই। অধিকাংশ যুবকই কেবল প্রাণটা নিয়ে পালিয়ে এসেছে। পথিমধ্যে পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রক্তভেজা কাপড়ে, আহত দেহ নিয়ে কোনমতে হুমড়ি খেয়ে এসে পড়েছে পশ্চিম বাংলার বর্ডার এলাকায়। শক্রর অব্যাহত তাড়া, অর্ধাহার-অনাহারে একটানা পথ চলার মধ্য দিয়ে এ সকল তরুণ জন্মভূমির ভিটে মাটি ছেড়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় এসে গড়িয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান পশ্চিম বাংলায়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মায়াজালে আত্মসমর্পণ করেছে তাঁরা অত্যন্ত অনিশ্চিতভাবেই। অপূর্ব সে দৃশ্য, অতুলনীয় সে আত্মসমর্পণ। যুগভেরীর অদৃশ্য আহ্বানের সাড়া দিয়েছে একটি জাতির যুব চেতনা। জাগ্রত চেতনার এই লেলিহান শিখা বিশ্বের যে কোন স্বৈরশক্তির ভিত পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে সমর্থ, সে তথ্য আমি ইতিহাসের পাতায় বহুবার পড়েছি। তাই তরুণ-যুবকদের ভীড় যত বৃদ্ধি পেতে লাগল, ততই আমি আশাবাদী হয়ে উঠলাম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সম্পর্কে। মনে-প্রাণে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে শুরু করলাম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে। তাঁরা যদি অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা না বাড়িয়ে দিত, তাহলে পূর্ব বাংলার তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধে ততটা সাড়া দিত কিনা সে সন্দেহ অনেকের মাঝেই আছে। একটি ঘুমন্ত জাতিকে বেয়নেটের খোঁচায় জাগিয়ে তোলার জন্য হানাদার বাহিনীর কৃতিত্ব একেবারে কম নয়। ভেতো বলে ঘৃণিত একটি জাতি রাতাঁরাতি যে কোন ‘মার্শাল রেস’ বা যোদ্ধা জাতির ন্যায় সগর্বে দাঁড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্যে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ কেবল আহাম্মকই বনে যায়নি, দারুণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। বাঙালী জাতির ইতিহাসই যে হচ্ছে যুদ্ধের ইতিহাস সেকথা জানা থাকলে হানাদার বাহিনী বেয়নেট নিয়ে খোঁচাতে যেত কিনা সন্দেহ। কারণ একটা জাতি কেবল বেয়নেটের আচমকা খোঁচাতেই রাতাঁরাতি যোদ্ধা জাতিতে পরিণত হয়ে যায় না, যুদ্ধের চেতনার সক্রিয় উপস্থিতিই একটি জাতিকে যোদ্ধা জাতি হিসেবে আত্মবিকাশলাভে সহায়তা করে। পাকিস্তানী বাহিনীর আচমকা আক্রমণ বাঙালী জাতির আত্মবিকাশের ধারাকে কেবল ত্বরান্বিত করেছে। আর তাই তো তীর্থযাত্রীদের ন্যায় দুটেছে তরুণ-যুবক অস্ত্রের সন্ধানে। বর্ডার অতিক্রম করতে সক্ষম হলেই ট্রেনিং ক্যাম্পের সন্ধানলাভ, সুতরাং ‘চলো চলো, বর্ডার চলো’ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে দিন-রাত ছুটে চলেছে মুক্তিপিপাসু কিশোর, তরুণ, যুবক। মায়ের স্নেহের বাঁধনের চেয়েও নিরাপদ মনে হয়েছে অস্ত্র শিক্ষা। তাই সকল স্নেহের বাঁধন ছেড়ে যেতে দেরী হয়নি, তেমনি দেরী হয়নি অস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করতে।

মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করা বাঙালী তরুণ ক্যাপ্টেন, মেজর পদের অফিসার দিয়েই শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে নন কমিশন অফিসার নায়েক এবং হাবিলদাররাও প্রশংসাজনক উদ্যোগ নিয়ে ট্রেনিং শিবিরগুলো অতি কষ্টে দাঁড় করিয়েছে। কোন ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ ব্যতিরেকেই এই দুরূহ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শিবির স্থাপনের ব্যাপারে কোন ধরনেরই অবদান রাখতে সক্ষম হয়নি। এই ট্রেনিং শিবিরগুলোই মূলত মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়ার ক্ষেত্র ‘নিউক্লিয়াস’ বা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। এই কৃতিত্বের দাবীদার ঐ সকল দেশপ্রেমিক বাঙালি আর্মি অফিসার এবং ব্যক্তিবর্গ, যারা সবরকম ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ‘নিউক্লিয়াস’ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের খানিকটা ভূমিকা থাকলেও তা আশানুরূপ ছিল না। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এমনকি পশ্চিম বাংলার নিরাপদ এলাকায় ট্রেনিং শিবির গড়ে ওঠার পরেও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ট্রেনিং শিবিরের আশেপাশেও দেখা যায়নি। তবে এর ব্যতিক্রম যারা ছিলেন তাদের সংখ্যা সীমিত।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের এই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন যে, ‘বেচারারা’ বিচ্ছিন্নভাবে যেভাবে যে পেরেছে বর্ডার অতিক্রম করার ফলে পশ্চিম বাংলায় গিয়ে এক রকম কক্ষচ্যুত নক্ষত্রের ন্যায়ই এখানে-ওখানে ছুটোছুটি করেছেন দীর্ঘদিন। তাদের নাকি নিজেদেরই কোনরূপ অবস্থান ছিল না, কি করেই বা যুদ্ধের খবর নেবে? কথাগুলোতে বেশ যুক্তি আছে, তবে অতটা জোরালো নয়। ‘বেনিফিট অব ডাউট’ বা ‘সন্দেহের সুযোগ’ নিতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যে মোটেও কার্পণ্য করেননি তার ভূরি ভূরি প্রমাণ পেয়েছি যখন তাদেরকে দেখেছি কোলকাতার অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে জমজমাট আড্ডায় ব্যস্ত। একাত্তরের সেই গভীর বর্ষণমুখর দিনরাতে কোলকাতার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হাঁটুতক কাদা জলে ডুবন্ত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলোতে অবস্থানরত হাজার হাজার তরুণের বেদনাহত চেহারাগুলো তাঁরা একবারও দেখেছে কি না তা আজও আমার জানতে ইচ্ছে করে। আমার জানতে ইচ্ছে করে কোলকাতার পার্ক স্ট্রীটের অভিজাত নাইট ক্লাবগুলোতে বীয়ার হুইস্কি পানরত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মনোমুকুরে একবারও ভেসে উঠেছে কি না সেই গুলীবিদ্ধ কিশোর কাজলের কথা যে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চিৎকার করে ঘোষণা করেছে ‘জয় বাংলা’। আমার জানতে ইচ্ছে করে আরো আরো অনেক কিছু। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করলেই তো আর জানা যায় না।

ভারতে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনেক কিছুই জানতে চেয়েছিলেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক এবং চিত্র নির্মাতা কাজী জহির রায়হান। তিনি জেনেছিলেন অনেক কিছু, চিত্রায়িতও করেছিলেন অনেক দুর্লভ দৃশ্যের। কিন্তু অতসব জানতে বুঝতে গিয়ে তিনি বেজায় অপরাধ করে ফেলেছিলেন। স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই তাঁকে সেই অনেক কিছু জানার অপরাধেই প্রাণ দিতে হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। ভারতের মাটিতে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের চুরি, দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা, যৌন কেলেঙ্কারী, বিভিন্ন রকম ভোগ-বিলাসসহ তাদের বিভিন্নমুখী অপকর্মের প্রামাণ্য দলীল ছিল- ছিল সচিত্র দৃশ্য। আওয়ামী লীগের অতি সাধের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজী জহির রায়হানের এতবড় অপরাধকে স্বার্থান্বেষী মহল কোন যুক্তিতে ক্ষমা করতে পারে। তাই বেঁচে থেকে স্বাধীনতার পরবর্তী রূপ দেখে যাওয়ার সুযোগ তাঁর হয়নি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩নং আসামী স্টুয়ার্ড মুজীবেরও ঘটেছিল এই পরিণতি। এই দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান, তেজোদীপ্ত যুবক স্টুয়ার্ড মুজীব আমার ৯নং সেক্টরের অধীনে এবং পরে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। তার মত নির্ভেজাল ত্বরিতকর্মা একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা সত্যিই বিরল। প্রচণ্ড সাহস ও বীরত্বের অধিকারী স্টুয়ার্ড মুজিব ছিল শেখ মুজীবের অত্যন্ত প্রিয় অন্ধভক্ত। মাদারীপুর থানার অন্তর্গত পালং অধিবাসী মুজিবকে দেখেছি বিদ্যুতের মতই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটোছুটি করতে। কি করে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করা যায়, ভারতের কোন নেতার সাথে যোগাযোগ করলে মুক্তিযুদ্ধের রসদ লাভ করা যায় কেবল সেই চিন্তা এবং কর্মেই অস্থির দেখেছি স্টুয়ার্ড মুজিবকে। মুজিব ভারতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেক কুকীর্তি সম্পর্কেই ছিল ওয়াকিফহাল। এতবড় স্পর্ধা কি করে সইবে স্বার্থান্বেষী মহল। তাই স্বাধীনতার মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ঢাকা নগরীর গুলিস্তান চত্বর থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায় স্টুয়ার্ড মুজিব। এভাবে হারিয়ে যায় বাংলার আর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।

ভারতে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলোও ছিল নানান কুকর্মে লিপ্ত আওয়ামী নেতৃত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই সচেতনভাবেই তাঁরা ট্রেনিং শিবিরগুলো এড়িয়ে চলতো। এ সকল ট্রেমিং শিবিরে অবস্থান করত সাধারণ জনগণের সন্তান, যাদের ভারতের অন্যত্র কোন ধরনের আশ্রয় ছিল না। যারা হোটেল কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে তাঁরা আর মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরের ধারে-কাছেও ভিড়েনি, অংশগ্রহণ করা তো দূরেই থাক। এ ধরনের সুবিধাভোগীদের নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমভাগে ভারতীয় স্পাই সংস্থা ‘র’ (RAW) মেজর জেনারেল ওভানের মাধ্যমে ‘মুজিব বাহিনী’ নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠনে হাত দেয়। এই বাহিনীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অবস্থাপন্ন সদস্যরাই কেবল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের ট্রেনিং পরিচালনা করা হয় ভারতের ‘দেরাধন’ শহরে। তাদের জন্যে বিশেষ সুবিধা এবং আরাম আয়েশের সুব্যবস্থা ছিল। ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন ছিল বাংলার সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের বিকল্প ব্যবস্থা। ‘মুজিব বাহিনী’ যুদ্ধে অংশগ্রহণের পূর্বেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। তাদের দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যই বলা চলে যে, সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধে তাদের রক্ত ঝরাতে হয়নি। তাদের অভিজাত রক্ত সংরক্ষিত করা হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ঝরানোর লক্ষ্যে।

অপরদিকে, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শিবিরগুলোর ছিল বর্ণনাতীত দুরবস্থা। সাধারণত এক হাঁটু কাদাজলে ডোবানো ট্রেনিং শিবিরগুলোতে না ছিল পর্যাপ্ত খাবার, না ছিল বাসোপযোগী কোন ব্যবস্থা। দিনরাত খেটেও তাঁরা পেটপুরে খেতে পায়নি। আধপেটা অবস্থায়ই তাদেরকে দুঃসহ জীবন যাপন করতে হয়েছে। সারা দিনে-রাতে দু’বেলা খিচুড়ি জুটে গেলেই সেদিনকে সৌভাগ্য মনে করা হতো। পরিধানে লুঙ্গি গামছাও ছিল এক ধরনের বিলাস। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে কেবল একটা হাফপ্যান্ট, কিংবা লুঙ্গি পরিধান করেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। ‘মওসুমের’ নির্বিচার বৃষ্টির ধারা তাদেরকে সামান্যতম বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে দিত না। হাঁটু কাদা মাটিতে মশার অত্যাচার নির্বিচারে সহ্য করে সারারাত দাঁড়িয়ে কাটাতে হতো তাদেরকে। তবু ট্রেনিং গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহে কখনো ভাটা দেখিনি আমি। একটা শিবিরে ৩ থেকে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এক সঙ্গে ট্রেনিং গ্রহণ করতো। প্রত্যেকটি শিবিরই ছিল পরিপূর্ণ। কোন বাধা-বিপত্তি কিংবা কোন অসুবিধেই তাদেরকে অস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। অসংখ্য মাসুম কিশোরকেও দেখেছি সোল্লাসে ট্রেনিং গ্রহণ করতে। কোন দুঃখ কষ্টই যেন তাদের কাছে লজ্জা বা দ্বিধার ব্যাপার, ছিল না। দুঃখবোধ তাঁরা কেবল তখনই করত যখন তাদের কম বয়স বিবেচনা করে অস্ত্র ট্রেনিং থেকে বিরত রেখে অন্যান্য কাজে নিয়োগ করার চেষ্টা চালান হতো। অস্ত্র শিক্ষা তাদের কাছে ছিল যেন প্রাণের ধন অত্যন্ত গর্বের বস্তু। পশ্চিম বাংলার বর্ডার এলাকায় আমার অধীনে পরিচালিত ১১টি ট্রেনিং শিবিরই ছিল অত্যন্ত জমজমাট। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৪ নম্বর আসামী জনাব সুলতান উদ্দীন আহমদ একজন দক্ষ ন্যাভাল কমাণ্ডে শিক্ষক হিসেবে এই সকল ট্রেনিং শিবিরগুলো সরাসরিভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই পরিচালনা করেছেন। তাঁর হাড়ভাংগা খাটুনীর দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য। ইছামতী নদীর তীরে টাকী শহরের বাকুন্দিয়ায় অবস্থিত ছিল বৃহত্তম ট্রেনিং শিবির। কোন কোন সময় ৫ থেকে ৭ হাজার যুবক এক সঙ্গে ট্রেনিং গ্রহণ করত।

এই সকল শিবির প্রথমে আমার পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠে। প্রথমভাগে ভারতীয় বর্ডার ফোর্স বি, এস, এফ- এর মাধ্যমে কিছু কিছু রসদ এবং খাদ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘ব্যাটেল পজিশন’ নেয়ার পরে সেনা ইউনিট থেকে রেশন নিয়মিতভাবে দেয়া হতো। কিন্তু সে রেশন ছিল নিতান্তই অপ্রতুল, কারণ দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই শত শত নতুন যুবক ট্রেনিংয়ের জন্য হাযির হতো। সুতরাং প্রাপ্ত রেশন সব সময়েই ‘শেয়ার’ করে চলতে হতো নবাগতদের সঙ্গে। বেসরকারী এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থাগুলো প্রভূতভাবে সাহায্য করেছে বলে হাজার হাজার যুবক অনাহারজনিত কারণে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছে। মানবতাবাদী ঐ সকল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর অবদান অতুলনীয় এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। স্বাধীনতার ১৭ বছর পরে আমার এখনো অতি স্পষ্টভাবে মনে আছে পশ্চিম বাংলার হামড়া অঞ্চল প্রধান শ্রী পি, কে রায়ের কথা, যিনি অকাতরে প্রচুর খাদ্য, তাঁবু এবং নগদ অর্থসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। এক সময়ে এই বাংলার ফরিদপুরবাসী পি, কে রায়ের চোখে দেখেছি মমতাপূর্ণ অনুভূতির স্পষ্ট ছাপ। ছিলেন হাবড়ার স্যামুয়েল সরকার। তিনি প্রাণভরা উচ্ছাস আবেগ নিয়ে এক এক সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দূরবস্থা দেখে কেঁদেই দিতেন। ট্রাক বোঝাই করে খাদ্যদ্রব্য, তাবু টারপলিন নিয়ে হাযির হতেন মুক্তিযুদ্ধের শিবিরে। ছিলেন দক্ষিণ ভারতের মিঃ মনু ভাই বিমানী। চার্চিলের মত একখানা দেহ টেনেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের শিবিরে শিবিরে ছায়ার মতোই ঘুরে বেড়াতেন সাহায্য-সহযোগিতা সহকারে। আরো দেখেছি ডঃ ত্রিগুণা সেনকে, অরুণা আসফ আলীকে, ব্যারিষ্টার জে,পি মিটারকে এবং শিশির বোসসহ আরো অনেক খ্যাতনামা ভারতীয় সন্তানদেরকে, যারা উন্মাদের মতই ছুটে ফিরতেন মুক্তিযুদ্ধের এক শিবির থেকে অপর শিবিরে। তাদের চোখে মুখে আমি যে অব্যক্ত বেদনা এবং উদ্বেগ প্রত্যক্ষ করেছি, তার শতকরা একভাগ পরিমাণও বেদনা বা উদ্বেগ আমি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের চেহারায় দেখতে পাইনি। পশ্চিম বাংলার সি,পি,এম নেতা শ্রী জ্যোতি বসুর সাথে সাক্ষাৎকালেও আমি তার মধ্যে লক্ষ্য করেছি গভীর উদ্বেগ। কিন্তু সে ধরনের উদ্বেগ সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত ছিল ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ভোগরত চেহারায়। নেতৃত্বের এই সীমাহীন দায়িত্বহীনতা এবং সচেতন প্রতারণামূলক আচরণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভোগান্তি অনেকগুণে বৃদ্ধি করেছে। তাঁরা সচেতনভাবেই যেমন এড়িয়ে চলেছেন মুক্তিযুদ্ধের শিবিরগুলো, তেমনিভাবেই এড়িয়ে চলেছেন শরণার্থী শিবিরগুলো। তবে মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের নামে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভারতের বিভিন্ন সম্পদশালী ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং সংস্থাসমূহ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থসম্পদ মালামাল সংগ্রহ করেছেন একথা সকলেরই জানা। কিন্তু সংগৃহীত সাহায্যের যৎকিঞ্চিত ব্যতীত আর কিছুই পৌঁছেনি মুক্তিযোদ্ধা কিম্বা শরণার্থী শিবিরে। সে সংগৃহীত অর্থে ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে বেনামে মোটা অংক যে জমা হয়েছিল তার ইতিহাস ভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের মোটেও অজানা নয়। যুদ্ধরত অবস্থায় দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি হতে দেখেও যারা ভারতের মাটিতে ভাগ্যোন্নয়নে মত্ত ছিলেন, তাঁরা ই যখন আবার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দাবী করেন, তখন ইতিহাস হয়তো বা মুচকি হেসে প্রচণ্ড কৌতুক বোধ করে বলে আমার বিশ্বাস। শরণার্থী শিবির থেকে অসহায় হিন্দু মেয়েদের কোলকাতা শহরে চাকরী দেয়ার নাম করে সেই সকল আশ্রয়হীনা যুবতীকে যারা কোলকাতার বিভিন্ন হোটেলে এনে যৌনতৃষ্ণা মেটাতে বিবেক-দংশন বোধ করেননি তাঁরা বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের নেতা হবেন না তো হবে আর কে বা কারা! হানাদার পাক বাহিনীর সুযোগ্য উত্তরসূরী তো একমাত্র তাঁরাই- আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ!

ভারত সত্যি সত্যিই বিশ্বস্ত বন্ধু! তা না হলে আওয়ামী লীগ নেতাদের এতো কুকর্মের খতিয়ান, দোষ-ত্রুটি, আয়েশের খবর জেনেও আজ পর্যন্ত সামান্যতম প্রকাশ করেনি বরং সাধ্যমত গোপন রেখেই যাচ্ছে- এটা একেবারে কম কথা নয়। হাদীস মতে, অপরের দোষ-ক্রটি নাকি প্রকাশ্যে বলতেও নেই, বন্ধু ভারত হাদীসটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে দেখা যায়।

ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবির চলাকালীন অবস্থায় এ ধরনের আরো বহু হাদীস ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আনুগত্যের সাথেই মেনে চলেছে বলেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের এতো সব পাপের বোঝা মাথায় নিয়েও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দাবী করতে মোটেও লজ্জা বোধ করছে না। লজ্জার বালাই তাদের নেই, তাদের বুকভরা রয়েছে ঈর্ষা।

ভারতের মাটিতে অবস্থিত ট্রেনিং শিবিরগুলোর কর্তৃত্ব সেক্টর কমাণ্ডারদের হস্তেই ন্যস্ত ছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মধ্যে বিরাজ করেছে প্রচণ্ড জ্বালা এবং ঈর্ষা। অবশ্য কিছু কিছু এম, পি এবং এম, এন, এ দেরকে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং শিবিরে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের দায়িত্ব পালনে অনেকেই উৎসাহ প্রদর্শন করেননি। আমার নবম সেক্টরে বাগেরহাটের এম, এন, এ, জনাব শেখ আজিজকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি কলকাতার আরাম আয়েশ পরিত্যাগ করে বর্ডার এলাকায় কখনো পদধূলি দেয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি। ঠাঁট-বাটের পুরুষ শেখ আজিজ সাহেব মনে-প্রাণে হয়তো মন্ত্রীত্বই কামনা করেছিলেন, সেক্ষেত্রে বিনে পয়সায় উপদেষ্টাগীরি তার মর্জি মাফিক হয়নি। পরবর্তীতে খুলনার সালাউদ্দীন ইউসুফকে ঐ একই পদে নিয়োগ করা হলে তিনি অবশ্য সীমান্ত এলাকায় এসে সপরিবারে বসবাস করেন এবং সাধ্যমত অবদান রাখারও চেষ্টা করেছেন। সাতক্ষীরার এম,এন,এ, আবদুল গফুর সাহেব যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন এবং নিবেদিতচিত্তে মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য কামনা করেছেন। সাতক্ষীরার তরুণ এম, পি, এ, স. ম. আলাউদ্দীন বেশ তৎপর ছিলেন। সর্বাধিক যার অবদান তিনি ছিলেন বরিশালের জনাব নুরুল ইসলাম মনঞ্জু, মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলো গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে খেটেছেন আমার সাথে। সাতক্ষীরার সীমান্ত অঞ্চল দেবহাটার জনাব শাহজাহান মাস্টার এবং জনাব আতিয়ার রহমানের অবদানও বিশেষভাবেই উল্লেখযোগ্য।

সকলের সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ট্রেনিং শিবিরগুলোতে ট্রেনিং শেষেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা ঘাঁটি গঠন করার জন্য ১০ জন থেকে ৩০ জনেরও দল পাঠিয়ে দেয়া হতো। প্রথমে জেলা, মহকুমা, থানা এবং পরে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল গেরিলা ঘাঁটি। জুলাই থেকে নভেম্বর প্রকৃতপক্ষে এই পাঁচ মাসের মধ্যেই আমার সেক্টর থেকে সর্বমোট ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং সহকারে দেশে সশস্ত্রভাবে অনুপ্রবেশ করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে ট্রেনিং শিবির চালু করে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দিয়েছে। মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। তাদেরকে বিশেষ দায়িত্বে অভ্যন্তরে পাঠানো হতো। তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও সরাসরি যুদ্ধেও তাঁরা অংশগ্রহণ করেছে। বাগেরহাটের এম, পি, এ সাহেবের বোন ছাত্রনেত্রী সালেহা বেগম, বরিশালের জয়া, বিথীসহ অনেকেই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

নভেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শিবিরগুলোর দায়িত্ব সরাসরি নিতে চেষ্টা করে। আমার সেক্টরে ততটা সুবিধা করতে না পারলেও কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার নিয়োগ করেছিল। ট্রেনিং শিবিরের অস্ত্রগুলোও প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। তখনই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটতে আরম্ভ করে। আমি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করেই অধিকাংশ অস্ত্র বারুদ ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন নৌ-কমাণ্ডো নূর মোহাম্মদ বাবুল, ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর, নৌ কমাণ্ডার বেগের হাতে তুলে দিই এবং তাদেরকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও সজাগ করে দিই। ভারত মুক্তিযুদ্ধে সকল অস্ত্র দিয়েছে একথা সত্য নয়। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অর্থেও প্রচুর অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সম্পদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তে সমর্পণ করার কোনই যুক্তি ছিল না।

আসলে ভারত বাংলাদেশে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করতে চেয়েছিল যাতে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা যেন কোনরূপ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম না হই। কিন্তু যুদ্ধ বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে কোন যোদ্ধাই সহজে নিরস্ত্র হতে চায় না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র তুলে দেব না এই বিদ্রোহের বাণীই সেদিন ছিল আমার মুখে। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়েই তা করেছিলাম। ভারতীয় কর্মকর্তাগণ আমার দুঃসাহসকে হয়ত মনে প্রাণে সেদিন ঘৃণা করেছেন এবং আমাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেয়ারও হয়তো পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।

প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ এবং সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানী সাহেবও আমার সাহসের তারিফ না করে দুর্বল চিত্তে নসিহত করতে ছাড়েননি। কিন্তু দেশমাতৃকার মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু হিসেবে আমি কারো করুণায় ভর করে বেঁচে থাকার চেয়ে বীরের ন্যায় মৃত্যু বরণ করাকে শ্রেয় মনে করেছিলাম। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকে রাতাঁরাতিই অধিকাংশ অস্ত্র, গোলা-বারুদ মোটর-লঞ্চ ভরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে দিতে সমর্থ হই। সেদিন এই দেশপ্রেমজনক অপরাধের জন্য ভারতের মাটিতেই আমার মৃত্যু হতে পারতো।

কিন্তু একজন ঈমানদার মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ হরণ করার ক্ষমতা কোন জবরদখলকারীর নেই- আল্লাহই ঈমানদারের নিশ্চিত রক্ষক।