ভাগ্যে আমি পথ হারালেম

ভাগ্যে আমি পথ হারালেম
কাজের পথে।
নইলে অভাবিতের দেখা
ঘটত না তো কোনমতে।
এই কোণে মোর ছিল বাসা,
এইখানে মোর যাওয়া-আসা,
সূর্য উঠে অস্তে মিলায়
এই রাঙা পর্বতে,
প্রতিদিনের ভার বহে যাই
এই কাজেরই পথে।।

জেনেছিলেম কিছুই আমার
নাই অজানা।
যেখানে যা পাবার আছে
জানি সবার ঠিক-ঠিকানা।
ফসল নিয়ে গেছি হাটে,
ধেনুর পিছে গেছি মাঠে,
বর্ষানদী পার করেছি
খেয়ার তরীখানা।
পথে পথে দিন গিয়েছে,
সকল পথই জানা।।

সেদিন আমি জেগেছিলেম
দেখে কারে।
পসরা মোর পূর্ণ ছিল,
চলেছিলেম রাজার দ্বারে।
সেদিন সবাই ছিল কাজে
গোঠের মাঝে মাঠের মাঝে,
ধরা সেদিন ভরা ছিল।
পাকা ধানের ভারে।
ভোরের বেলা জেগেছিলেম,
দেখেছিলেম কারে।।

সেদিন চলে যেতে যেতে
চমক লাগে।
মনে হল, বনের কোণে
হাওয়াতে কার গন্ধ জাগে।
পথের বাঁকে বটের ছায়ে
গেল কে যে চপল-পায়ে
চকিতে মোর নয়ন দুটি
ভরিয়ে অরুণরাগে।
সেদিন চলে যেতে যেতে,
মনে হল, কেমন লাগে।।

এত দিনের পথ হারালেম
এক নিমেষে।
জানি নে তো কোথায় এলেম
একটু পথের বাইরে এসে।
দিনের পরে কেটেছে দিন
পথে পথে বিরামহীন।
জানি নে তো চলেছিলেম
হেন অচিন দেশে।
চিরকালের জানাশোনা
ঘুচল এক নিমেষে।।

রইল পড়ে পসরা মোর
পথের পাশে।
চারিদিকের আকাশ আজি
দিক্‌-ভোলানো হাসি হাসে।
সকল-জানার বুকের মাঝে
দাঁড়িয়েছিল অজানা যে-
তাই দেখে আজ বেলা গেল,
নয়ন ভরে আসে।
পসরা মোর পাসরিলাম,
রইল পথের পাশে।।

১৬ চৈত্র ১৩১৮
শিলাইদহ