অনেক গভীর বই প’ড়ে

অনেক গভীর বই প’ড়ে ফেলে
অনেক নির্জন কথা ভেবে
সুস্থির আলোর দিকে বৈকালের
উত্তরিল চিন্তা মোর-
চিন্তা নয়- চিন্তা নয়- এই বার এক ফোঁটা আধ ফোঁটা স্বপনের ঘোর
যখন বিকালবেলা আসিবে এ-জীবনের
যদি আমি বেঁচে থাকি
পৃথিবীর বস্তি, দুঃখ, অন্তর্দাহ, বিপ্লবের হাত থেকে ছুটি পেয়ে
দুমড়ানো রংচটা রবারের বলের মতন যেন ব্যবহৃত- বহু বছরের
আমারে ফেলিবে ছুঁড়ে পৃথিবীর সমীচীন সুস্থ বালকেরা
যেন আমি সকলেরে মেনে নিয়ে জীর্ণ এক ক্যাঙারুর মতো
প্রান্তরের রৌদ্রে আর ঘাসে এসে নেমে পড়ি- থেমে থাকি
অথবা পেঁচার মতো গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
দীর্ঘ বৃত্তাকার এক বিবর্ণ দেয়াল গ’ড়ে
আমার নিজের ব’লে খানিকটা মৃত্তিকার তরঙ্গেরে ঘিরে রাখি
কেন তাহা আমার নিজের?
এই এক অহঙ্কার মসৃণ ঘাসের ঘ্রাণে শুয়ে থেকে
মরে না ক’ পৃথিবীর স্বপ্নপায়ী জীবন বীজের;-

বুদ্ধ- খৃস্ট- কমরেডের অটুট বেলুনে উড়ে বহু দূর
তার পর এক দিন সব গ্যাস ফুঁড়ে ফেলে
শক্তি হই আমার এ-সঙঘারামে ফিরে এসে-
অন্ধকারে একটি করুণ মোম জ্বেলে
এই বার বেলুনের পেট নয় আর
বরং এ দারুচিনিগন্ধময় বিচিত্র কঠিন অন্ধকার
কাঠের সিঁড়ির মতো এঁকে-বেঁকে চ’লে গেছে যেন দূর আকাশের
বায়ু-ভরপুর স্তব্ধ সুবিশাল তেতলার দিকে
মাইলের-পর-মাইল সমতল ছাদে
মশারিবিহীন এক বিছানা অপেক্ষা করে
পরিতৃপ্ত ক্লাউনের মতো যেন আমার হৃদয়
অসীম রজ্জুর চঙ্গ বেয়ে-বেয়ে সেই সব অনুভব নিয়ে আসে
তবু মোর ভয়ঙ্কর প্রশ্নপ্রীতি হিঁচরায়:
‘মোম আছে? বই আছে সেই দূর নভোতলে তবে?’
চোখ বুজে ঝাপসা রগড়ে
বলিল বাতাস যেন অবিরল সমুদ্রের স্বরে
‘ছাগলের চামড়ার পার্চমেন্টে নোট লিখে কী-বা আর হবে?’

আমাদের চিন্তা সংজ্ঞা প্রয়োজন
চামড়ার পার্চমেন্ট- শজারুর রুষ্ট কাঁটা না-কি
বলিল বাতাস হেসে একরাশ অরণ্যের গন্ধে মুখ ঢাকি
ব্যাট এঁটে বল যদি ছুঁড়ে মারে যেইখানে ভিজিয়ানাগ্রাম
তা হলে বলিবে বল: মাইলের-পর-মাইল অগস্ত্যর মতো
তত্র নিরুদ্দেশে আমি চলিলাম
সেইখানে সীমাহীন সমতল ছাদে
প্রাইমাস মোবিলের স্বাদে
পৌরজ্যেষ্ঠদের সব গাভীগ্রাস ছেড়ে দিয়ে
জিনোমের বিজ্ঞানের কাছে হেরে গিয়ে
যেন এক নারী আছে
বয়সের আক্রমণ বাড়িতেছে
যেমন গভীর নদী বেড়ে যায় সমুদ্রের স্বাদ গন্ধ পেয়ে
তবুও আবার যেন বেড়ে যায় বক্রাকারে বায়ুর মতন
একটি গেলাস শুধু হাতে ক’রে অন্ধকারে
পাহাড়ের গ্লাসিআরে ফিরে গিয়ে…

মনে হল গাধার লোমের মতো জামা গায়ে এঁটে
পৃথিবীতে হেঁটেছি অনেক দিন আমি
রক্ত কাদা দুধ আর স্যাকারিন চেখে
খানিকটা স্থিরতা আমি চাই তাই
স্বচ্ছতোয়া তটিনীর সাথে আরও দেখা হবে স্তব্ধতায়
সন্দিহান ঢিলে জামা প’রে রাতের বাতাস যেন
ঘাসের উপরে মোরে ক্রমে-ক্রমে করিবে গভীর আবিষ্কার
চারি-দিকে উঁচু-উঁচু তরুদের মৈথুনের লীলা
জন্ম, মৃত্যু, (অদৃশ্য আশ্বাস)
অরণ্যের বনস্পতি মানুষের ইস্পাতের কাছে কেন ধরা দেয়
প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়ি ঋষিদের পাথর-মূর্তির মতো
ঢের শক্ত দাড়ি নিয়ে পরিপক্ক গূঢ় হয়ে কেন প’ড়ে থাকে
মৃত্যু যেন তার কাছে শিশু শুধু
প্রান্তরের মধ্যরাতে কীট ব্যাং উঁচু-উঁচু যুবা তরুদের
অভিভাবকের মতো যেন জেগে আছে
দূরে গুর্খা-সৈন্যদের ব্যারাকের পরে
টেকনিক্যাল ইস্কুলের ছাদে
টিনের উপরে বৃষ্টি যদিও পিটায়ে যায় ঢেঁড়া
তবুও টিনের তরে নয়
বৃষ্টি যেন নেমে আসে নির্জন ঘাসের ঠোঁটে
প্রীত অনুভব যেন বিনিময় হতেছে পরস্পর এদের ভিতরে
ইহারা প্রতীক্ষা যেন- প্রেম যেন
ইহাদের বুকে শুয়ে মধ্যস্থতা টের পায় আমার হৃদয়
ঘাসের মতন মনে হয়
আমার আত্মারে যেন
বাবলার গলি থেকে উড়ে এসে
ফুরোনো আখের খেতে- চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
পেঁচা’র ধূসর রোম বহু দিন কাটাল তো আমাদের সময়ের পুরে
সব শান্তি- সব ধ্যান- নিস্তব্ধতা- বাণিজ্যের জাহাজে সে নিল স্তূপ ক’রে
তার পর উড়ে যাবে যেন কোন মহীয়ান কার্নিশের দিকে
আমার কাটুক দিন পৃথিবীতে
এই সব শব্দ শুনে- ছবি দেখে- এই সব ব্যবহার লিখে।